যে রূপ সম্পর্ক অশ্বিনীকুমারদ্বয় ও অশ্বের মধ্যে! পর্ব – ১

অশ্বলায়ণী সূর্য্যাপত্যদ্বয়েণরলঙ্কৃতম্।
তদাপতৌ অশ্বিনৌয়েতি আত্মবান্।।

অশ্বলায়নের কন্যা, তাই বলা হোলো অশ্বলায়নী। ইনিই সূর্য্যা অর্থাৎ সূর্য্যদেবের স্ত্রী সংজ্ঞা। সুতরাং অশ্বলায়ণী সূর্য্যা অর্থাৎ সংজ্ঞা দুই অপত্য দ্বারা অলংকৃত বা ভূষিত হইলেন অর্থাৎ অশ্বলায়ণী সংজ্ঞা দুই সন্তান লাভ করিলেন এবং “তদাপতৌ” “অশ্বিনৌ” অর্থাৎ সেই দুই সন্তান “অশ্বিনীকুমারদ্বয়” নামেই খ্যাত বা পরিচিত হইলেন ।

আবার মহর্ষি অশ্বলায়ন, যিনি অশ্বিনী নক্ষত্রের অধিপতি ও গুরু । মহর্ষি পরাশর তাই শিষ্যের নাম দিলেন অশ্বলায়ণ । যথা– “অশ্বিন্যাধিষ্ঠাত্রৈ গুরুঞ্চৈব ঋতমায়ণমেতেশ্বলায়ণম্।” আর তাই, মহর্ষি অশ্বলায়ণ নিজের নামানুসারে কন্যার নাম দিলেন “অশ্বিনী” আর এই অশ্বিনীর নাম অনুসারেই তাঁহার সন্তান দুইটি নাম হইলো অশ্বিনীকুমারদ্বয়।

আবার মতান্তরে বলা হইয়া থাকে, সূর্য্যদেবের প্রবল তেজ ধারণ করিতে ভীত সন্ত্রস্ত হইলেন দেবী সংজ্ঞা । তখন সূর্য্যদেব তাহা বুঝিতে পারিয়া অশ্বরুপ ধারণ করিলেন এবং দেবী সংজ্ঞা অশ্বিনী রুপ ধারণ করিলে অশ্বরুপী সূর্য্যদেব অশ্বিনীরুপা সংজ্ঞার গর্ভাধান করিলেন। সূর্য্যবীর্য্যের আন্তর্তেজ প্রশমিত হইলে পর তাঁহারা পুনরায় নিজ স্বরুপে ফিরিয়া আসিলেন । সুতরাং অশ্বিনীরুপা সংজ্ঞার গর্ভে ভ্রুণরুপে তাহাঁদের জন্ম হইয়াছিল বলিয়াই তাঁহাদেরকে অশ্বিনীকুমার বলা হইয়া থাকে।

এই অশ্বিনীকুমারদ্বয় পরবর্তীকালে আয়ুর্বেদ ও আয়ুর্বিদ্যা তথা চিকিৎসাবিদ্যায় এবং ভেষজবিদ্যায় পূর্ণ জ্ঞান লাভ করিয়াছিলেন। তাই, তাহাদেরকে দেববৈদ্যও বলা হইয়া থাকে। এবার তাহাদের মনে ব্রহ্মবিদ্যা লাভের তীব্র আকাঙ্খা জাগ্রত হইল । তাহারা ব্রহ্মবিদ্ গুরুর অন্বেষণ করিতে করিতে মহর্ষি আথর্বণের আশ্রমে উপস্থিত হইলেন।

মহর্ষি আথর্বনও তাহাদের প্রার্থনায় অত্যন্ত খুশি হইলেন। কিন্তু তিনি প্রথমে তাহা দান করিতে অসম্মত হইলেন । কারণ, ঋষি আথর্বণ দধ্যঙ এই বিদ্যা (প্রবর্গ্যবিদ্যা ও মধুবিদ্যা) লাভ করিয়াছিলেন দেবরাজ ইন্দ্রের নিকট হইতে। তাহারও কারণ হইল সমস্ত দেবগণের মধ্যে কেবলমাত্র ৫ জনই এই ব্রহ্মবিদ্যা জানিতেন । আর তাঁহারা হইলেন ইন্দ্র, অগ্নি, বায়ু, বরুণ ও যম ।

ঋষি ইন্দ্রের নিকট হইতে এই বিদ্যা প্রাপ্ত হইলেও শর্ত দান করিয়াছিলেন ইন্দ্র ঋষি আথর্বণ দধ্যঙকে। ইন্দ্র বলিয়াছেন,”তুমি যদি এই বিদ্যা অপরকে দান করিয়া থাকো,তাহা হইলে তৎক্ষণাৎ তোমার মুণ্ড খসিয়া পড়িবে।” সুতরাং ঋষির মুখে এই শর্তের কথা শুনিয়া মহাপারঙ্গম দেববৈদ্য অশ্বিনীকুমারদ্বয় ঋষিকে আশ্বস্ত করিলেন এবং তাহার পর তাঁহারা একটি সুলক্ষণযুক্ত অশ্ব আনয়ন করিলেন । অতঃপর সেই অশ্বের মুণ্ড কর্ত্তণ করিলেন এবং সেই সাথে তাঁহারা তৎক্ষণাৎ ঋষি আথর্বণ দধ্যঙ্ এর মুণ্ডও কর্ত্তন করিয়া তাঁহার দেহে অশ্বমুণ্ড স্থাপন করিলেন ।

এইবার ঋষি দধ্যঙ্ অশ্বমুখে অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে এই বিদ্যা দান করিলেন । আর, এই বিদ্যা দান করিবার সাথে সাথেই ইন্দ্রের কোপে ঋষি দধ্যঙ্ এর অশ্বমুণ্ড কাটিয়া পড়িয়া গেলো। কিন্তু অশ্বমুণ্ড কাটিয়া পড়িয়া গেলেও অশ্বিনীকুমারদ্বয় তৎক্ষণাৎ ঋষি আথর্বণ দধ্যঙ্ এর নিজ মুণ্ড স্থাপন করিলেন তাঁহার দেহে। এইভাবে অশ্বিনীকুমারদ্বয় ঋষি অথর্বার পুত্র ঋষি আথর্বণ দধ্যঙ্ (দধ্যচ্/দধীচি) এর নিকট হইতে ব্রহ্মবিদ্যা লাভ করিলেন ।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.