যে কারণে সন্ধিপূজা করা হয়!

দুর্গা পুজোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে এই পুজো হয়, তাই একে বলা হয় ‘সন্ধিপুজা’। মহাষ্টমীর শেষ ১ দন্ড অর্থাৎ ২৪ মিনিট এবং মহানবমীর প্রথম দন্ড অর্থাৎ ১ম ২৪ মিনিট অর্থাৎ মোট ২ দন্ড অর্থাৎ ৪৮ মিনিট ধরে চলে সন্ধি পুজো।

দুর্গাপূজায় এই সময়টার একটা বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। সন্ধিপূজায় দেওয়া হয় ১০৮টি পদ্ম এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। নৈবেদ্যয় দেওয়া হয় গোটা ফল (লাল রঙের ফল থাকা বাঞ্ছনীয়), জবা ফুল, শাড়ি, সাদা চাল, গহনা (যদি দিতে চান) এবং বেলপাতা।

প্রতিটি পারিবারিক পুজোয় এবং বারোয়ারি পুজোয় যে যার নিজের মত করে সাজিয়ে দেন ই নৈবেদ্যগুলি, কিন্তু ১০৮টি পদ্ম এবং ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার নিয়মটি কিন্তু চিরাচরিত, এর কোনো অন্যথা হয় না ।

সন্ধি পুজোয় দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয় চামুণ্ডা রূপে। সন্ধি পুজোর সময়েই দেবী মহামায়া মৃন্ময়ী মূর্তি থেকে চিন্ময়ী রূপে আসেন ও ভক্তের পূজা গ্রহণ করেন।

অনেক জায়গায় এই সন্ধিপূজার সময় বলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। কোথাও ছাগল বলি হয়, যেখানে তা হয় না সেখানে কলা, আঁখ, চালকুমড়ো ইত্যাদিও বলি দেওয়া হয়। সন্ধিপুজোর এই বলি দান অষ্টমী তিথিতে হয় না, তা হয় সন্ধি পুজোর প্রথম দণ্ড অর্থাৎ ২৪ মিনিট পার হওয়ার পরেই।

শাস্ত্র মতে, সংযমী হয়ে উপবাসী থেকে সন্ধিব্রত পালন করলে নাকি যমদুখ থেকে মুক্তি মেলে। অর্থাৎ মৃত্যুর সময়ে মায়ের কৃপা লাভে যম স্পর্শ করতে পারে না। এমনকী বলা হয়ে থাকে, ভক্তিভরে সন্ধি পুজোয় যোগ দিলে সারা বছর দুর্গাপূজা না করেই সেই ফল লাভ করা যায়।

আর এই পুজোয় সকলেরই যোগ দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে মঙ্গল লাভ করতে হলে সত্যিকারের উপবাস প্রয়োজন। উপ-বাস অর্থাৎ দেবী সমীপে বাস করতে হবে। গোটা দিন দেবীর জপ করতে হবে। নিষ্ঠাভরে পুজোতেই মেলে মঙ্গল।

পুরাণ অনুসারে অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধের সময়ে দেবী অম্বিকার কপালে থাকা তৃতীয় নেত্র থেকে দেবী কালিকা প্রকট হয়েছিলেন ঠিক এই সময়কালেই। আবার অন্যত্র এমনটাও বলা হয়ে থাকে,দেবী দুর্গা এই দুই তিথির মিলনক্ষণেই আবির্ভূতা হন দেবী চামুন্ডারূপে।

যখন মহিষাসুরের সঙ্গে দেবী যুদ্ধ করছিলেন, সেই সময় চণ্ড ও মুণ্ড আক্রমণ করে। চণ্ড ও মুণ্ড ছিল মহিষাসুরের দুই সেনাপতি। এদের দুর্গা বধ করেছিলেন, সেই থেকে তাঁর নাম হয় চামুণ্ডা। চণ্ড ও মুণ্ডকে যে সন্ধিক্ষণে বধ করা হয়েছিল, তাকে স্মরণে রেখে সন্ধি পুজোর আয়োজন করা হয়।

অন্যদিকে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার জন্য আশ্বিনমাসে রামচন্দ্রের অকালবোধনের যে উল্লেখ পাওয়া যায় কৃত্তিবাসের রামায়ণে, সেখানেও রামচন্দ্র সন্ধিপূজা সমাপন কালে দেবীর চরণে ১০৮ পদ্ম নিবেদন করার আশায় হনুমানকে দেবীদহ থেকে ১০৮টি পদ্মফুল তুলে আনতে বলেন।

হনুমান ১০৭টি পদ্ম পান। দেবীদহে আর পদ্ম ছিল না। দেবীদহে একটি পদ্ম কম ছিল। সেই সময়ে তির-ধনুক তুলে নিজের একটি চোখ উপড়ে ফেলতে চান দশরথনন্দন।

তার কারণ হিসেবে কথিত আছে , দীর্ঘদিন অসুর নিধন যজ্ঞে মা দুর্গার ক্ষত বিক্ষত দেহের অসহ্য জ্বালা দেখে মহাদেব কাতর হন। মায়ের সারা শরীরে একশো আটটি স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। মহাদেব তাঁকে দেবীদহে স্নান করতে বললেন সেই জ্বালা জুড়ানোর জন্য।

দেবীদহে মায়ের অবতরণে একশো সাতটি ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয়েছিল একশো সাতটি পদ্মের। মহাদেব দুর্গার এই জ্বালা সহ্য করতে না পারায় তাঁর চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু নিক্ষিপ্ত হয় মায়ের একশো আটতম ক্ষতের ওপর।

দেবীদহে স্নানকালে সেই অশ্রুসিক্ত ক্ষতটির থেকে যে পদ্মটি জন্ম নিয়েছিল সেটি মা নিজে হরণ করেছিলেন। কারণ স্বামীর অশ্রুসিক্ত পদ্মফুলটি কেমন করে তিনি চরণে নেবেন।

কৃতজ্ঞতাঃ সববাংলায়, kolkata24x7, বোল্ডস্কাই

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.