যে কারণে বিখ্যাত অশ্বিনীকুমারদ্বয়!

অশ্বিনীকুমারদ্বয়, নামান্তরে অশ্বিদ্বয়, মূলত বৈদিক দেবতা। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সবিত (সূর্যদেব) ও শরণ‍্যু, নামান্তরে সংজ্ঞা, দেবীর যমজ পুত্রদ্বয় হিসাবে উল্লিখিত ও পরিচিত। ঋগ্বেদে এই যমজ দেবতাদের ভিষক বা চিকিৎসক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সূর্য ও সংজ্ঞা অশ্বরূপে সঙ্গম করার ফলে এই দুই যমজ পুত্রের জন্ম হয়েছিল। বহু মূর্তিতেই অশ্বিনীকুমারদের তাই অশ্বমুখ দেখা যায়।

অশ্বরূপে শরণ‍্যু সঙ্গমকালে সূর্য আরও এক পুত্র লাভ করেন। সেই তৃতীয় পুত্রের নাম রেবন্ত। রেবন্ত অশ্বদের অধিপতি দেবতা। অশ্বিনী সূর্যের অপর নাম। তাই সূর্যপুত্র এই দুই যমজ দেবতার নাম অশ্বিনীকুমারদ্বয়। এঁদের ভিতর যিনি অগ্রজ, তার নাম নাসত‍্য এবং যিনি অনুজ, তার নাম দস্র।

ঋগ্বেদে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের উদ্দেশ‍্যে একটি সূক্ত গীত হয়েছে। ক্লাসিকাল সংস্কৃত সাহিত‍্যেও অশ্বিনীকুমারদ্বয় বারবার উল্লিখিত হয়েছেন। মহাভারতের আদিপর্বের পৌষ‍্যপর্বাধ‍্যায়ে উপমন‍্যোপাখ‍্যানে দেব-চিকিৎসক হিসাবে তারা উল্লেখযোগ‍্য ভূমিকা পালন করেছেন। মহাভারতের আদিপর্বেরই সম্ভবপর্বাধ‍্যায়ের অন্তর্গত যুধিষ্ঠিরাদির জন্মবৃত্তান্ত থেকে জানা যায় পাণ্ডুর কনিষ্ঠা পত্নী মাদ্রী সুদর্শন ও চিরতরুণ এই দেবভিষকদ্বয়ের ঔরসে ক্ষেত্রজ যমজ পুত্র লাভ করেন যাঁরা পিতা-দেবতাদের মতনই সুদর্শন ও অশ্ববান হয়েছিলেন।

নাসত‍্যের ঔরসে নকুল ও দস্রের ঔরসে সহদেব জন্মলাভ করেন। নকুল ও সহদেব পিতৃ-পরিচয়ে আশ্বিনেয় নামেও পরিচিত। একবার চ্যবনের রূপবতী পত্নী স্নানরতা সুকন্যাকে দেখে মোহিত হয়ে ওঁরা সুকন্যাকে প্রস্তাব করেন চ্যবনকে ত্যাগ করে ওঁদের একজনকে বিবাহ করতে। সুকন্যা তাতে সম্মত হন না। ঘটনাচক্রে ওঁদের প্রসাদে চ্যবন তার যৌবন ফিরে পান। চ্যবনের তখন ওঁদের বর দেন যে, দেব-কর্মচারী হলেও ওঁদের সোমপান করবার অধিকার থাকবে।

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে এরা অশ্বিনীকুমারদ্বয় নামে খ্যাত। পরবর্তী সময়ে এরা চিকিৎসাবিদ্যায় সুপণ্ডিত হয়ে উঠলে– স্বর্গবৈদ্য উপাধিতে ভূষিত হন। চিকিৎসা বিষয়ক এদের রচিত গ্রন্থের নাম হলো চিকিৎসা-সার-তত্ত্ব।

আয়োধধৌম্য ঋষির উপমন্যু নামক শিষ্য যখন ক্ষুধা সহ্য না করতে পরে আকন্দগাছের পাতা খেয়ে অন্ধ হয়ে যান, উপমন্যু এই কুমারদ্বয়ের আরাধনা করেন। এরপর এঁরা উপমন্যুর চোখ ভালো করে দেন এবং উপমন্যুকে কিছু উৎকৃষ্ট বর দেন। [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব্ব। উপমন্যু উপখ্যান]

এরা দেখতে একইরকম ছিলেন এবং সবসময় এক সাথেই থাকতেন। অত্যন্ত রূপবান হিসাবে এঁরা খ্যাতি লাভ করেছিলেন। পাণ্ডুপত্নী মাদ্রী ক্ষেত্রজ সন্তান লাভের জন্য কুন্তীর শেখানো মন্ত্রের সাহায্যে এই দুই ভাইকে আহ্বান করেছিলেন। উভয় দেবতার মাধ্যমে মাদ্রী দুটি সন্তান লাভ করেছিলেন। এই সন্তানদ্বয় হলো– নকুল ও সহদেব।

এঁরা একটি সুবর্ণ রথে দিনে তিনবার ও রাতে তিনবার পৃথিবী পরিভ্রমণ করেন। আশ্বিনীকুমারদ্বয় সম্পর্কে বেশ মতভেদ রয়েছে। যেমন–

১. নিরুক্তকার যস্কের মতে : চন্দ্র ও সূর্য।
২. বেদের মতে : পৃথিবী ও স্বর্গ, দিবা ও রাত্রি, সূর্য ও চন্দ্র, বিবস্বান ও কারণ্যুর পুত্র, আকাশের পুত্র, সিন্ধুগর্ভ সম্ভূত, দক্ষ সম্ভূত ইত্যাদি।

এঁর অপরাপর নাম : অব্দিজ, অরুণাত্মজ, অর্কতনয়, অর্কনন্দন, অর্কপুত্র, অর্কসূত, অর্কসূনু, অশ্বিনীকুমার, অশ্বিনীপুত্র, অশ্বিনীসূত, অশ্বিনীসূত।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.