ভূতচতুর্দশী কি ও কেন পালন করা হয়

অমাবস্যা শুরুর সাথে সাথে শুরু হবে মা কালী পূজা ও দীপাবলি। অশুভ শক্তিকে বিনাশ করার জন্য প্রদীপের আআলোয় চারদিকে উদ্ভাসিত হবে। আর এই  পুজোর আগের দিন পালিত হয় ভূতচতুর্দশী। এই রাতে রাতে নাকি বিদেহী আত্মারা নেমে আসে মর্ত্যে। তবে এই দিনটি নিয়ে নানা কাহিনী আছে। দেখে নি কি কি সে কাহিনী।

দানবরাজ বলির বড্ড অহংকার ছিল দানবীর হিসাবে। তিনি স্বর্গ মর্ত্য ও পাতালের অধীশ্বর হয়েছিলেন পুরাণেরকালে। এতে ধীরে ধীরে একসময় দারুণ সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন দেবতারা। তখন দেবগুরু বৃহস্পতির পরামর্শে ভগবান বিষ্ণু বামনরূপে এসে তাঁর পা রাখার জন্য তিন পা পরিমাণ জমি ভিক্ষা চাইলেন রাজা বলির কাছে।

স্বয়ং বিষ্ণু যে এসেছেন রাজার কাছে এ বিষয়টা পরিস্কার ছিল, কিন্তু কোনওভাবে এতটুকুও বিষ্ণুকে বুঝতে দেননি রাজা বলি। তবুও তিনি দান দিতে রাজি হলেন কথা রক্ষার্থে।

তখন বামনরূপী ভগবান বিষ্ণু একটা পা রাখলেন স্বর্গে, আর একটা পা দিলেন মর্তে। এবার নাভি থেকে বের হল আর একটা পা। এই পা রাখলেন রাজা বলির মাথায়।

এর পর ধীরে ধীরে বলি ঢুকে গেলেন পাতালে। বলি জেনে বুঝেও দান দিয়েছিলেন বলে ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির নরকাসুর রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন মর্ত্যলোকে।

 

নরকাসুররূপী বলি রাজা কালীপুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশী তিথিতে মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে। সঙ্গে থাকে রাজার অসংখ্য অনুচর হিসাবে পরলোক জগতের ভূত প্রেতরা। তাদের দূরে রাখার জন্য জ্বালানো হয় প্রদীপ।

তিথিটা থাকে চতুর্দশী, তাই জ্বালানো হয় চোদ্দোটা প্রদীপ। প্রদীপগুলি মূলত নিবেদিত হয় স্বর্গত পিতৃপুরুষ, প্রেতাত্মা, ধর্ম, রুদ্র, বিষ্ণু, কান্তারপতি বা অরণ্যে অধিষ্ঠিত দেবতাদের উদ্দেশ্যে।

পরলোকগত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পারলৌকিক যেকোনও কাজের ফল কখনও বৃথা যায় না। তাঁদের আত্মার আশীর্বাদ সূক্ষ্মভাবে কাজ করে থাকে যিনি তাঁর উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানোর কাজটি করে থাকেন তার ওপর। কথা সূর্যের মতো সত্য। শুভ কাজের ফল যেমন কখনও বৃথা যায় না, তেমনই অশুভ কর্মের ফল দেহধারীকে ভোগ করতেই হবে।

পরলোক বিষয়টা সাদামাটা চোখে দেখা যায় না বটে, তবে একে উড়িয়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। পারলৌকিক জগত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাটা খুবই কম।

 

প্রদীপ জ্বালানো সম্পর্কে অন্য যে সমস্ত মতের প্রচলন আছে তার মধ্যে একটিতে বলা হয়— এই দিনে রামচন্দ্র চোদ্দো বছরের বনবাস কাটিয়ে অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন। এত বছরের দুঃখের দিনের অবসানের আনন্দে এবং রামচন্দ্রকে স্বাগত জানানোর জন্য সমগ্র অযোধ্যবাসী প্রদীপ জ্বালিয়ে অযোধ্যা নগরীকে আলোকিত করে দিয়েছিল। সেই থেকে এই প্রথা চলে আসছে।

 

কালী পুজোর রাতে বা ভূত চতুর্দশীর রাতে শ্মশান বা কবরস্থানে যেতে নেই। কারণ এই সময় এই সব জায়গায় নানা রকম নেগেটিভ শক্তি থাকে। এতে নিজের এবং পরিবারের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

এই দু’দিন সন্ধ্যাবেলার পর কোনও ভাবেই বাড়িঘর ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করবেন না। মনে করা হয়, এর ফলে লক্ষ্মীদেবীকে ঘর থেকে বিতারিত করে দেওয়া হয়।

এই দু’দিন রাতে রান্না করার পর রান্নাঘর পরিস্কার করে রাখতে হয়। এতে পরিবারে মঙ্গল হয়।

এই দিনগুলোতে সন্ধ্যার পর ঘরে প্রদীপ জ্বালাবেন। আবার অনেকে মনে করেন অশুভ শক্তি দূর করতে এই দিন সারা রাত আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়। পরদিন দীপান্বিতা অমাবস্যায় অনেকে অলক্ষ্মী বিদায় করতে লক্ষ্মী পুজো করে থাকেন।

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.