ভাইফোঁটার রীতিনীতি। পর্ব – ১

ভাইফোঁটা হিন্দুদের একটি চিরন্তন সম্প্রীতির উৎসব। এই উৎসবের নাম ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়া’। এই উৎসবের আরও একটি নাম হল যমদ্বিতীয়া। ভাই-বোনের ভালবাসার বন্ধন অনন্তকাল অটুট রাখার জন্য বংশপরম্পরায় এই বিশেষ উৎসব পালিত হয়। ভাই-বোনের নিঃস্বার্থ ও স্বর্গীয় ভালবাসার প্রতীক এই ভাইফোঁটা আমাদের মনে শান্তি, সৌভাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের এক চমকপ্রদ আবেশ সৃষ্টি করে।

এই উৎসবের পোষাকি নাম ভ্রাতৃদ্বিতীয়া অনুষ্ঠান। কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে (কালীপূজার দুই দিন পরে) এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালি হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ২য় দিনে উদযাপিত হয়। মাঝেমধ্যে এটি শুক্লপক্ষের ১ম দিনেও উদযাপিত হয়ে থাকে।পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পরিচিত। সেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষদিন। আবার, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ভাইবিজ। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব পরিচিত ভাইটিকা নামে। সেখানে বিজয়াদশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব।

বাঙলার ঘরে ঘরে ভাইফোঁটাকে ঘিরে নানা লোকাচার। কারও ফোঁটা আবিরে, কারও শিশিরে। কেউ ভাইকে ফোঁটা পরান চন্দনে কেউ বা ঘি, দই দিয়ে। খাবার দাবার নিয়েও কত নিয়ম। কেউ ভাইকে পান ছেঁচে তবে খেতে দেন। কারণ, পান চিবোতে ভাইয়ের কষ্ট হতে পারে। আবার কোথাও কোথাও ভাইকে নিমপাতা খাইয়ে বিপদ থেকে রক্ষা করা হয়। সব শেষে অবশ্য এক থালা মিষ্টি থাকেই। আর দুপুরে বা রাতে চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়।

ভাইফোঁটাকে দেখা যেতে পারে সূর্য-সংক্রান্ত উৎসবের প্রেক্ষিতেও। এই যে চন্দনের ফোঁটা দেওয়া, সে আদতে সূর্যের রূপক। অবাঙালিরা যে রোলির তিলক আঁকেন, তার লাল রঙেও নিহিত রয়েছে সূর্যের তেজ। ধান-দূর্বা বা চালের অনুষঙ্গেও ফিরে আসছে সূর্যের দেওয়া জীবনের আশ্বাস। সূর্যকিরণে পরিপুষ্ট হয় শস্য, সেই শস্যে জীবনধারণ করে মানুষ। এভাবেই যম বা মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখা! কেন না, যে ঋতুতে এই উৎসব, সেই হেমন্তের পরেই আসবে প্রবল শীত। তখন তাপমাত্রা কম্পাঙ্কের নিচে নামবে, শৈত্যে মৃত্যু হবে কিছু মানুষের। সেই শৈত্য থেকে এভাবেই প্রিয়জনকে দূরে রাখা!

সোর্সঃ সংগৃহিত

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.