ভাইফোঁটার যেসব গল্প অজানা। পর্ব – ১

সূর্যদেব ও তার পত্নী সংজ্ঞার যমুনা নামে কন্যা এবং যম নামে পুত্র সন্তান ছিল। তাঁরা হলেন মৃত্যুদণ্ডদাতা যমরাজ ও তাঁর বোন যমুনা হলেন সূর্যের সেই দুই সন্তান। পুত্র ও কন্যা সন্তানের জন্মদানের পর সূর্যের উত্তাপ স্ত্রী সংজ্ঞার কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের প্রতিলিপি ছায়াকে দেবলোকে রেখে মর্তে প্রত্যাবর্তন করেন। সংজ্ঞার প্রতিরূপ হওয়াই কেউ ছায়াকে চিনতে পারেনা।

বিমাতা ছায়া কালক্রমে যমুনা ও যমের প্রতি দুঃব্যবহার করতে থাকেন কিন্তু ছায়ার মোহে অন্ধ সূর্যদেব কোন প্রতিবাদ না করায় অত্যাচারের মাত্রা দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে। এভবেই একদিন যমুনা তার বিমাতা কর্তৃক স্বর্গরাজ্য থেকে বিতারিত হয়। কালের নিয়ম মেনেই যমুনার বিবাহ হয়। বিয়েরপর তারা পরস্পর থেকে অনেক দূরে থাকতেন।

দীর্ঘকাল দিদিকে চোখের দেখাটাও যম দেখতে পায়নি তাই তার খুব মন খারাপ করছিল। দীর্ঘকাল দেখা না হওয়ায় বোন যমুনার খুব ইচ্ছে হয় ভাই যমকে দেখার। তখন ঠিক করল যে করেই হোক দিদির সাথে দেখা করতেই হবে তাছাড়া মন শান্ত হবেনা। যম রাজদূত মার্ফত যমুনার নিকট বার্তা পাঠায়। ভায়ের আসার খবর পেয়ে যমনা যারপরনাই খুশি হয়।

কালী পুজার দুদিন পরে অর্থাৎ ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন যম যমুনার বাড়ি যাত্রা করে। ভাই যমরাজ এলে ভালমন্দ খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ের সর্বাঙ্গীন কুশল কামনা করে প্রার্থনা করেন। দিদির বাড়ি পৌঁছে যম দিদির অতিথ্যে মুগ্ধ হয়। যম পৌঁছানোর আগেই যমুনা বিশাল খাবরের আয়োজন করেছিল। দিদি যমুনার আতিথ্য ও ব্যবহারে সুপ্রসন্ন যম যমুনাকে উপহার হিসেবে বরদান প্রার্থনা করতে বলে।

দিদি যমুনা এমনই এক বর প্রার্থনা করেছিল যা একটা ভাই অন্তপ্রান দিদির চিরন্তন প্রার্থনা হওয়া উচিত। যমুনা বলেছিল “ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন প্রত্যেক ভাই যেন তার বোনের কথা স্মরন করে আর প্রত্যেক বোন যেন তার ভায়ের মঙ্গলময় দীর্ঘ জীবন কামনা করে।” যম তার দিদি যমুনাকে তাই বর হিসেবে দান করেন এবং বোনের ডাক পেলে বারবার আসার প্রতিশ্রুতি দেন যম। এরপর যম পিতৃগৃহে ফিরে আসে।

যমুনা তাঁর ভাই যমের মঙ্গল কামনায় আরাধনা করে যার পুণ্য প্রভাবে যম অমরত্ব লাভ করে। বোন যমুনার পুজার ফলে ভাই যমের এই অমরত্ব লাভের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমান কালের বোনেরাও এই সংস্কার বা ধর্মাচার পালন করে আসছে। আবার অনেকে বলে থাকেন যমুনার সঙ্গে বিয়ে হয় শ্রীকৃষ্ণের দাদা বলরামের। সেই দিনটিও ছিল কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথি। বিয়ের আগে ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে মঙ্গলকামনা করেছিলেন যমুনা। সেই থেকেও ভাইফোঁটার প্রচলন বলেও অনেকে বলে থাকেন।

সোর্সঃ সংগৃহিত

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.