ধনতেরাস কি? ধনতেরাস কেন পালন করা হয় এ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা

‘দিওয়ালি’ বা ‘দীপাবলি’ আমাদের দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় উৎসব। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং অত্যন্ত ধুমধামের সহিত উদযাপিত হয় এই উৎসব। দীপাবলি হল মন্দের উপরে ভালোর জয়যাপন। কথিত আছে, ১৪ বছরের বনবাসের পর অযোধ্যাতে ফিরে আসা ভগবান রামের স্মরণে উদযাপিত হয় এই উৎসব। দীপাবলী মূলত পাঁচ দিনের উত্‍সব। প্রতিবছরই সবার জীবন থেকে অন্ধকার দূরে সরিয়ে আলো নিয়ে আসে দীপাবলি। তবে, ‘দিওয়ালি আসছে…’ এই কথাটা আরও মনে করিয়ে দেয় যে উৎসব সেটা হল,’ধনতেরাস’। দীপাবলির কয়েকদিন আগে পালিত হয় এটি। ধনতেরাস আসা মানেই দীপাবলি আসা। বিশেষত, এই রীতি পালনের প্রচলন অ-বাঙালিদের মধ্যে হলেও, বর্তমানে বাঙালিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে এটি। ধনতেরসের পরের দিন পালিত হয় ভূত চতুর্দশী।

ধনতেরাস বা ধন ত্রয়োদশী বা ধন্বন্তরি ত্রয়োদশী হলো হিন্দুদের অন্যতম জনপ্রিয় একটি উৎসব। সকল ধার্মিক হিন্দুরা এই উৎসবে ভক্তি এবং শ্রদ্ধা সহকারে পালন করে থাকে। এর আর এক নাম আছে। ধনাত্রয়োদশী বা ধনবত্রী ত্রয়োদশী। “ধন” শব্দের মানে সম্পত্তি। ত্রয়োদশী শব্দের অর্থ হিন্দু ক্যালেন্ডারের ১৩তম দিন। দীপাবলীর সময় লক্ষীপুজোর দিন দুই আগে ধনতেরাস হয়। হিন্দু ধর্ম মতে এদিনই বিষ্ণুর থেকে লক্ষ্মীর কাছে শক্তি প্রবাহিত হয়। এই শক্তি সেখান থেকে গোটা সৃষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে দেন লক্ষ্মী দেবী। বলা হয়, ধনতেরাসের দিন দেবী লক্ষ্মী তার ভক্তদের গৃহে যান ও তাদের ইচ্ছাপূরণ করেন। সম্পদের দেবতা কুবেরও এদিন পূজিত হন। লোককথা অনুযায়ী এদিন কোনো জিনিস কিনলে তার বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। ধনতেরসের দিন নতুন সোনা বা জামা কাপড় ও কেনা হয়। সুস্বাদু খাবার তৈরি ও রংগোলি তে ভরে ওঠে সকলের বাড়ি। মাডোযারি সম্প্রদায়ের মানুষ রা ধনতেরসের দিন কুবের ও লক্ষীর পূজো করে।কারণ কুবের ও লক্ষী এদের সম্পদের রক্ষাকারী হিসেবে পূজিত করা হয়।

ধনতেরসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ধনতেরাস শব্দটি দুটি শব্দ দ্বারা গঠিত – ‘ধন’ অর্থাৎ অর্থ বা ধন এবং ‘তেরাস’ কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশ দিনটিকে উপস্থাপন করে। ধনতেরসের আর এক নাম ধনাত্রয়োদশী বা ধনবত্রী ত্রয়োদশী। কথিত আছে, এইদিনেই সমুদ্র মন্থনের সময় দেবী লক্ষ্মী দুধের সমুদ্র থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। তাই এইদিনে দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। পারিবারিক ও অর্থনৈতিক শ্রী বৃদ্ধির কামনায় একাধিক ধাতুর জিনিস কেনার চল রয়েছে ধনতেরসের সময়। বিভিন্ন অলংকার যেমন সোনা, রুপা ছাড়াও কাঁসার, তামার বা পিতলের জিনিস কেনা হয়ে থাকে এইসময়।

ব্যবসায়ীদের ধনতেরাস

ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছে এই দিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। শাস্ত্র মতে ধনতেরাস এর দিনে ঘরে বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নতুন কোনও ধাতুর জিনিস আনলে ঘটে ‘শ্রী-বৃদ্ধি’। আবার ধনতেরাসের দিন অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অর্থবর্ষের সূচনা হয়; লোকজন নতুন বর্তন, বাসন, গয়না প্রভৃতিও কিনে থাকেন এই দিনে। তবে বেশির ভাগ বাঙালি ব্যবসায়ীদের অর্থবর্ষের সূচনা হয় পয়লা বৈশাখে।

ধনতেরসের পৌরাণিক ব্যাখ্যা

পুরাণের মান্যতা অনুসারে ধনতেরাস উৎসবটি বহু প্রাচীন একটি উৎসব । বিভিন্ন পুরাণ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা যা জানতে পারি তা হল , ধনতেরাসের দিন ভগবান ধন্বন্তরী আবির্ভূত হন ধরাধামে। ধন্বন্তরী হলেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার দেবতা । এছাড়াও অনেকেই এই দিনে ধনের দেবতা কুবেরের ধরাধামে আবির্ভূত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে থাকে । ধন্বন্তরী দেবতা হাতে কলস নিয়ে আবির্ভূত হন । আর সেই কলসে থাকে ধন, সম্পদ অর্থ ও বিভিন্ন মূল্যবান রত্ন। এছাড়া অনেকের মতে এই কলসে থাকে অমৃত আর তা বিভিন্ন মূল্যবান ধন সম্পদের বিনিময়ে সংগ্রহ করতে হয় ভগবান কুবের এর কাছ থেকে। সেই জন্য এই দিন সোনারূপো বা অন্যান্য অলংকার এবং বাসনাদি কেনার কথা প্রচলিত আছে।

এছাড়াও আর একটি গল্প প্রচলিত আছে হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী একবার ঋষি দুর্বাসার অভিশাপে দেবরাজ ইন্দ্র লক্ষ্মীহীন হয়ে পড়েন। সেই সময় প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে দেবতারা ছুটে যান, তখন প্রজাপতি ব্রহ্মা তাদের মৈনাক পর্বত নিয়ে সমুদ্র মন্থন করতে উপদেশ দেন এবং এই কাজে অসুরদের সহায়তাও নিতে উপদেশ দান করেন। সেই মতো সমুদ্র মন্থন করে দেবতারা এবং অসুররা সম্মিলিতভাবে ।আর এই সমুদ্র মন্থন করার সময় সমুদ্রগর্ভ থেকে মা লক্ষী ধন সম্পদ সহ আবির্ভূত হন। আর এইভাবেই দেবলোক পুনরায় মা লক্ষ্মীকে লাভ করেন। দেবতাদের মা লক্ষ্মী লাভের এই ঘটনাটি ঘটেছিল কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে ।আর এই দিনটিকে উদযাপন করার জন্য ধরাধামে মা লক্ষীর পূজা অর্চনা করা হয়ে থাকে।আর মায়ের আশীর্বাদ যেন সবার বাড়িতে বর্ষিত হয় তাই বিভিন্ন মূল্যবান অলংকার ধাতু যেমন কেনা হয় তেমনি কেনা হয়ে থাকে বাসনাদি।

এছাড়াও আর একটি গল্প প্রচলিত আছে ধনতেরাস উপলক্ষে উপলক্ষে গল্প প্রচলিত আছে ধনতেরাস উপলক্ষে উপলক্ষে গল্পটি হলো এইরূপ, পুরাকালে এই দেশে হিমা বলে এক রাজা বসবাস করত । সেই রাজার ছিল এক সুন্দর রাজপুত্র। কিন্তু রাজপুত্রের উপর ছিল এক অভিশাপ। সেই অভিশাপে রাজপুত্রের বিয়ের চতুর্থ দিনেই রাজপুত্র মারা যাবেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর এই কথা ভেবে রাজা রাজপুত্রের বিবাহ করাতে ইচ্ছুক ছিলেন না। কিন্তু একবার রাজপুত্রের সাথে এক রাজকন্যার সাক্ষাৎ হয়, এবং দুইজনের মধ্যে প্রেম হয়। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু বিবাহের পর নববধূ তার শ্বশুর মশাইয়ের কাছে থেকে জানতে পারে তার স্বামীর উপর যে অভিশাপ আছে তার কথা। তখন অত্যন্ত বুদ্ধিমানী রাজবধূ বিবাহের চতুর্থ দিনে প্রথমেই গণেশের পূজা অর্চনা শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে মা লক্ষীর পূজা করেন। তখন এই দুই দেবতা এবং দেবী তার পুজায় খুশি হয়ে তার কাছে আবির্ভুত হন। তখন রাজবধূ তাদের কাছে তার ধন অর্থাৎ স্বামীর মঙ্গল কামনা করেন এবং তার স্বামীর অকাল মৃত্যু রোধ করতে অনুরোধ করেন।

তখন তারা বলেন তুমি যদি তোমার বুদ্ধির সাহায্যে ভগবান যমকে তোমার গৃহে প্রবেশ করতে না দাও তাহলেই রাজপুত্রের প্রাণ রক্ষা পাবে এবং তার দীর্ঘায়ু হবে। এছাড়াও মা লক্ষী তাকে জানিয়ে দেন ভগবান যম তার রাজপ্রাসাদ সর্পবেশে আসবেন। এই বলে দেবী লক্ষী অদৃশ্য হয়ে যান। তখন বুদ্ধিমানী রাজবধূ রাজকোষ থেকে সকল মূল্যবান অলঙ্কার ধাতু যেমন সোনা, রুপা, হীরা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন এবং তা রাজ প্রাসাদের যে কক্ষে রাজকুমার আছে তার চারপাশে ছড়িয়ে দেন তারপর চারপাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন। যখন সর্পবেশী যমরাজ রাজকুমারের খোঁজে রাজপ্রাসাদে আসেন তখন তিনি প্রদীপের আলোয় এবং অলঙ্কারের চমকে এবং উজ্জ্বলতায় তার চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ফলে দিকভ্রষ্ট হয়ে সর্পবেশী যমরাজ রাজপ্রাসাদের পথ হারিয়ে ফেলেন এবং সেইভাবে রাতভর রাজপ্রাসাদ খুঁজে পান না,ফলে একপ্রকার ব্যর্থ হয়ে যমলোকে ফিরে যান।আর এই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীর দিন।তাই এই দিনটিকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে হিন্দুদের মধ্যে উৎসব আকারে পালন করা হয়। যা বর্তমানে ধনতেরাস নামে পরিচিত। এই দিনটিতে প্রত্যেক ধর্মপ্রান হিন্দু পরিবার লক্ষী এবং গণেশ পূজার মাধ্যমে বাড়ির বাইরে প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং মূল্যবান অলঙ্কার ধাতু ক্রয়ের মাধ্যমে উদযাপন করে।

ধনতেরসের পুজোর উপযুক্ত সময়

ধনতেরসের পুজো কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষে ত্রয়োদশী তিথিতে প্রদোষকালে সম্পন্ন হয় ধনতেরসের পুজো। প্রদোষকাল অর্থাৎ সন্ধ্যাকালে ধনতেরসের পুজো করা হয়। তবে ধনতেরাস উৎসবের জন্য পুন্যক্ষন বা সন্ধিক্ষন শুরু হয় প্রদোষ কাল ও ত্রয়োদশী তিথির সম্মিলিত সময়ে।

ধনতেরসের দিন কেন প্রদীপ বা যমদীপ ধরানো হয়

হিমা রাজার ছেলের জন্ম পত্রিকাতে বিয়ের চতুর্থীর দিনে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয় ।এর ভয়ে তার নববিবাহিত স্ত্রী তাকে সারাদিন ঘুমতে দেননি।।এবং নিজের সমস্ত মূল্য বান অলঙ্কার গুলো গেটের বাইরে একটি ডালিতে সাজিয়ে রাখলেন। ও তার চারপাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলেন। এবং তার স্ত্রী সারাক্ষণ গান গাইতে থাকলে । যাতে তার স্বামী না ঘুমিয়ে পড়ে । সেই রাতে যখন মৃত্যুর দেবতা যম সাপ রূপে আসেন । কিন্তু জ্বালানো প্রদীপের আলো ও অলঙ্কারের ছটায় তার চোখ ধাঁধিয়ে যায় ।তখন আর যমরাজ তার বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেন না। তখন সাপ রূপ ধারী যম ওই ডালিতে সাজানো অলঙ্কারের উপর বিরাজমান হন এবং বিবাহিতার এই অভ্যর্থনা পেযে সন্তুষ্ট হয়ে রাজকুমার কে জীবনদান দেন। এই জন্য আমাদের দীর্ঘায়ু ও যমরাজ কে সন্তুষ্টির জন্য ধনতেরসের দিন যম দীপ জ্বালানোর ও রেওয়াজ রয়েছে ।

 

ধনতেরসে কেন কেনা হয় মূল্যবান ধাতু?

পৌরাণিক কথা অনুযায়ী কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রযোদশ তিথির দিন ধন্বত্বরীর জন্ম হয় । এই জন্য এই তীথি ধনতেরাস তিথি নামেও পরিচিত।ওই দেবতার উত্থান কালে উনার হাতে অমৃতের কলসে পরিপূর্ণ ছিলো। যেহেতু কলস হাতে নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন তাই এদিন নতুন বাসনপত্র কেনার ও রেয়াজ আছে। আবার কথিত রয়েছে, রাজা হিমার পুত্রবধূ তাঁর স্বামীকে বাঁচিয়ে ছিলেন যমরাজের কোপ দৃষ্টি থেকে। যে ঘরে তাঁর স্বামী ছিলেন তার দরজার কাছে সোনা, রূপা, প্রদীপ ইত্যাদি সাজিয়ে রেখে ঘরটিতে উজ্জ্বল করে তোলেন। আর ঘরের উজ্জ্বলতা দেখে ফিরে যান যমরাজ। আর সেই ঘটনা ঘটে ধনতেরসের দিনই। সেই ঘটনা ঘিরেই ধনতেরসের সোনা, রূপা কেনবার প্রচলন রয়েছে।

কি কি কিনবেন না

ধনতেরসে সোনা-রূপো কিনলে যে ঘরে লক্ষ্মীদেবী বাঁধা পড়েন, সে তো জানা কথা। কিন্তু শাস্ত্রমতে এদিন অনেক কিছু কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞাও কিন্তু আছে। অশুভ প্রভাব এড়াতে এদিন কী কী কিনবেন না, তা জেনে নিন।

১. এই তালিকায় প্রথমেই আসবে লোহার নাম। লোহার বাসন বা লোহার অন্য কোনও দ্রব্য ধনতেরসে ভুলেও কিনবেন না। এটি কিন্তু আপনার জীবন শেষ করে দিতে পারে। অনেকেই ধনতেরসে স্টিলের বাসন কিনে থাকেন। কিন্তু জানেন কি, স্টিল যেহেতু লোহারই আরও একটা রূপ, তাই স্টিলও এদিন এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
২. খালি কলসি বা হাঁড়িও এদিন ঘরে নিয়ে আসা ভালো নয়। জানি দোকান থেকে আপনাকে খাবার ভর্তি বাসন বিক্রি করবে না। তাই বাড়িতে নিয়ে আসার আগে ওই পাত্রে জল ভরে নিন।
৩. ধনতেরসে কখনোই কোনও ধারালো বস্তু যেমন ছুরি-কাঁচি কিনবেন না।
৪. ধনতেরাস কেনাকাটার জন্য শুভ বলে অনেকেই এগিন গাড়ি কেনেন। কিন্তু তা না করাই ভালো। একান্তই কিনতে হলে গাড়ির দাম আগের দিনই মিটিয়ে দিন।
৫. তেল, ঘি জাতীয় দ্রব্য এদিন কিনবেন না। রান্নার জন্য আগে থেকে তেল বা ঘি কিনে ঘরে রেখে দিন।
৬. কালো রঙের যে কোনও কিছু ধনতেরসে কিন্তু না কেনাই ভালো। ধনতেরসে কালো রঙের দ্রব্য কিনতে তা দুর্ভাগ্য বয়ে আনে বলে বিশ্বাস।
৭. ধনতেরাস ও দিওয়ালিতে অনেকেই প্রিয় মানুষদের উপহার দেন। এই উপহার কিন্তু ধনতেরসের দিন কিনবেন না। আগে থেকে কিনে রেখে দিন।
৮. কাঁচের সঙ্গে রাহুর যোগ রয়েছে। তাই কাঁচের কোনও দ্রব্য ধনতেরসে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
৯. যে একটি বস্তু থেকে ধনতেরসে দূরে থাকবেন, তা হল নকল সোনা। সোনা কনা ধনতেরসে শুভ হলেও নকল গোল্ড প্লেটেড গয়না এদিন ভুলেও কিনবেন না।

সোনা ছাড়া আর কী কিনতে পারেন

১. তামা বা পেতলের বাসন এদিন কিনুন। এবং তা ঘরের পূর্ব দিকে রাখুন।
২. রূপোয় বাসনপত্র কেনা এদিন অত্যন্ত মঙ্গলজনক। নতুন বাসন কিনে ধনতেরসের দিন সেটি ঘরের পূর্ব দিকে রাখবেন।
৩. ধনতেরসের দিন ঝাড়ু কেনাও মঙ্গলজনক। ঝাড়ু কেনার অর্থ আপনি দারিদ্র্যকে ঘর থেকে বিদায় করছেন।
৪. বৈদ্যুতিক সামগ্রী যেমন ফ্রিজ, মোবাইল ফোন বা মাইক্রোওভেন কিনতে পারেন এদিন। নতুন কেনা বৈদ্যুতিক সামগ্রী ধনতেরসে উত্তর-পশ্চিম দিকে রাখুন।
৫. এছাড়া আপনার পেশার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে কোনও সামগ্রী ধনতেরসে কেনা যায়। যেমন ব্যবসায়ীরা অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার কিনতে পারেন। অফিসের পশ্চিম দিকে এটি রাখবেন।
৬. যাঁরা লেখাপড়ার কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা পেন কিনতে পারেন।
৭. পেশাদার শেফরা কিনতে পারেন রান্নার যে কোনও সামগ্রী।
৮. কিনতে পারেন লক্ষ্মী-গণেশের সোনার কয়েনও।

সোনার কয়েন কিনতে পকেটে বেশি চাপ পড়লে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি কিনেও শ্রী সুক্তা মন্ত্র পাঠ করতে পারেন। ধনতেরসে স্বস্তিক চিহ্ন বাড়ির মূল দরজার বাইরে লাগান। এটি আপনার জীবনে সৌভাগ্য আনবে। ১১টি গোমতী চক্র কিনে হলুদ কাপড়ে মুড়ে আলমারি বা লকারের মতো কোনও নিরাপদ স্থানে রাখুন। রূপো চাঁদের একটি প্রতীক চাঁদ শান্তি প্রদান করে ও আমাদের মনকে শান্তি প্রদান করে। মনের সন্তুষ্টিকে পৃথিবীর বড়ো সম্পদ বলা হয় ।যাদের কাছে স্বাস্থ্য ও সন্তুষ্টি আছে তারাই হলো আসল সম্পদ শালী।

ধনতেরাসে সৌভাগ্য ফিরে পেতে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি

ধনতেরাসের দিন শুধু সোনা কিনলেই হবে না, এই উৎসবের রয়েছে বেশ কিছু নিয়মও।

১. এই দিনে সারা বাড়ি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
২. বাড়ির মূল প্রবেশদ্বারের সামনে রঙ্গোলী দিতে হবে।
৩. লক্ষ্মীর পাঁয়ের চিহ্ন এঁকে দেবীকে আহ্বাণ করতে হবে।
৪. অকাল মৃত্যু ঠেকাতে এদিনে যমরাজের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালাতে হবে।
৫. একটি ছোট ঘটে নতুন কেনা ধাতু বা গয়না নিয়ে তাতে সামান্য চাল, সুপারী, ১৩ টি পদ্মবীজ, গঙ্গাজল, দিয়ে উপর থেকে ফুল, সোনা বা রূপোর কয়েন রাখতে হবে যদি নতুন গয়না না থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি পুরনো গয়নাও ব্যবহার করতে পারবেন।

 

কেন ধনতেরাস পালন করবেন?

১. পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য থাকার কামনা করে ধনতেরাস উৎসব পালন করা হয়।
২. এই উৎসব পালনের মাধ্যমে পরিবারের সকলের অকাল মৃত্যু রোধ করার কামনা হয়।
৩. এই উৎসব পালনের বাড়ির মধ্যে মা লক্ষীর সর্বদা কৃপালাভের কামনা করা হয়।
৪. এই উৎসব পালনের মাধ্যমে বাড়িতে কুবের দেবের আশীর্বাদ লাভ করার কামনা হয়।
৫. এই উৎসব পালনের মাধ্যমে গৃহের সকলের মানসিক শান্তি কামনা করা হয়।
৬. এই উৎসব পালনের মাধ্যমে বাড়ির মধ্যে দারিদ্র্যতা দূর করার কামনা করা হয়।

রাশি অনুযায়ী কি ধাতু কিনবেন?

ধনতেরাস মানেই কী সোনা কিনতে হবে? শাস্ত্রমতে, এই সময় নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী, যেকোনও শুদ্ধ ধাতুই কেনাই মঙ্গলজনক ৷ তবে জ্যোতিষ শাস্ত্রমতে, বিভিন্ন রাশির জন্য বিভিন্ন ধাতু কেনা উচিত৷ তবেই ধনতেরাস হয়ে উঠবে মঙ্গলজনক ৷ আসবে সমৃদ্ধি ৷

মেষ রাশি : মেষরাশি পক্ষে এই সময়টা একটু সচেতন থাকা উচিত ৷ অর্থনৈতিক দিক থেকে সমস্যা আসতে পারে ৷ তাই ধনতেরাসে এবার অল্প ওজনের হলেও সোনা কিনুন ৷ কালীপুজোর আগের রাতে, ঠাকুর ঘরে কেনা সোনা রাখুন লক্ষ্মীর সামনে ৷

মিথুন রাশি : মিথুন রাশির পক্ষেও সময়টা শুভ ৷ দেরিতে হলেও, আটকে যাওয়া কাজগুলো হবে ৷ ধন সম্পত্তি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে ৷ ধনতেরাসে অল্প ওজনের সোনা কিনতে পারেন ৷ নইলে কিনুন রুপো ৷

কর্কট রাশি : কর্কট রাশিরা একটু সাবধান থাকুন ৷ অর্থ অপচয় হতে পারে ৷ ধনতেরাসে কিনুন পিতল ৷

সিংহ রাশি : সিংহ রাশিদের জন্য সময়টা মোটামুটি ভালোই যাবে৷ সমৃদ্ধি আনতে হলুদ ধাতু কিনুন ৷ তা সোনা হোক বা পিতল ৷

কন্যা রাশি : কন্যা রাশিদের পক্ষে সময়টা শুভ ৷ তবে চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যা আসতে পারে ৷ সৌভাগ্য ধরে রাখতে ধনতেরাসে সোনার কয়েন কিনতে পারেন ৷ সোনার কয়েনটি রাখুন ঠাকুর ঘরে লক্ষ্মী ঠাকুরের পায়ের সামনে ৷

তুলা রাশি : তুলা রাশির মানুষেরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন, আপনার জন্য সময়টা শুভ৷ সৌভাগ্য ধরে রাখতে সোনার বা রুপোর কয়েন কিনুন

বৃশ্চিক রাশি : বৃশ্চিক রাশিদের পক্ষে বছরের শেষটা একটু ঝামেলায় কাটবে ৷ তবে নতুন বছর থেকে সৌভাগ্য শুরু ৷ ধনেতেরাসে কিনুন, পিতল

ধনু রাশি : নতুন কাজের সুযোগ আসতে পারে ৷ নতুন বাড়ি বা গাড়ি কেনার সুযোগ রয়েছে ৷ ধনতেরাসে কিনুন রুপোর কয়েন ৷

মকর রাশি : মকর রাশির পক্ষে সময়টা সুযোগ ৷ বিবাহ যোগ রয়েছে ৷ সৌভাগ্য ধরে রাখতে ধনতেরাসে কিনুন রুপোর কয়েন ৷ রাখুন ঠাকুর ঘরে লক্ষ্মী ঠাকুরের পায়ের কাছে৷

কুম্ভ রাশি : সময়টা শুভ ৷ বিদেশ সফর হতে পারে ৷ নতুন কাজের সুযোগও আসতে পারে৷ ধনেতেরাসে কিনুন পিতল ৷

মীন রাশি : শরীরের দিকে নজর রাখুন ৷ বছরের শেষে শরীর খারাপ হতে পারে ৷ তবে অন্যান্য দিক থাকবে ঠিক ৷ ধনেতেরাসে কিনুন রুপোর কিছু ৷ রাখুন ঠাকুর ঘরে ৷

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.