দুর্গাপুজোয় বলিদান কি শাস্ত্রসম্মত?

দেবীর পুজোয় পশুবধ শাস্ত্র-সম্মত না শাস্ত্র-বিগর্হিত? পশুবলি বিরোধীদের প্রধান যুক্তি, মা কি কখনও সন্তান হত্যা সমর্থন করেন, না সন্তান ভক্ষণ করেন? মানবের ন্যায় পশুরাও বিশ্বজননীর সন্তান।

বিশ্বজননী সবল সন্তান কর্তৃক দুর্বল সন্তানের হত্যা সমর্থন করতে পারেন কি? সাধারণত,দুর্বল সন্তানের প্রতি সকল জননীরই স্নেহের আধিক্য দেখা যায়। এখানে তাঁর ব্যতিক্রম কী ভাবে সম্ভব?

আসলে ধর্ম ও শাস্ত্রের রহস্য অতি গূঢ় ও সুক্ষ্ম। শাস্ত্রে সর্বদা এবং সর্বাবস্থায় সর্বজীবে হিংসায় বিরত থাকতে বলে হয়েছে। শাস্ত্রের বিধি অনুসারে দেবী পুজোয় হিংসাকে ‘হিংসা’ বলা যায় না। তাকে ‘অহিংসা’ বলে।

‘গরুড় পুরাণ’-এ এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বৈধ ও অবৈধ ভেদে হিংসা দ্বিবিধ। আপনার রসনা ও উদর তৃপ্তির জন্য অথবা অকারণ পশুবধকে ‘অবৈধ হিংসা’ বলে। কিন্তু দেবকার্যে পশুবধ দূষণীয় নয়। দেবকার্যে পশুবধকে ‘বৈধ হিংসা’ বলে, যা অহিংসার তুল্য।

দেবীর সন্তোষ বিধানের জন্য বলিদান অবশ্য কর্তব্য। বলি না দিলে দেবী পুজো অঙ্গীকার করেন না। “বলিং বিনা নৈব দেবী পুজামঙ্গীকরোতি হি”। তাছাড়া দুর্গাপুজোয় যেহেতু “স্বপন-পূজন-বলিদান ও হোম” এই চারটি পর্ব রয়েছে, এর মধ্যে একটি না করলে মহাপূজা খণ্ডিত হয়ে যায়, তাই বলিদান আবশ্যিক।

মাংস রক্তাদি বর্জিত বলি ‘সাত্বিক’ আর মাংস রক্তাদিযুক্ত বলি ‘রাজসিক’। ‘কালিকা পুরাণ’-এ ইক্ষুদণ্ড, কুস্মাণ্ড এবং মধুবলির তুল্য এবং দেবীর তৃপ্তিকার্যে ছাগের সদৃশ বলা হয়েছে। কোনও বৈষ্ণব বা শৈব গৃহে এই ভাবেই মহাপূজা করা হয়।

কলিকালে বলিদানেই কেবল অশ্বমেধ যজ্ঞের ফললাভ হয়। বেদেই রয়েছে, যজ্ঞ বা বধের নিমিত্ত পশুকুলের সৃষ্টি এবং যজ্ঞার্থেই এদের কেবল বধের বিধান রয়েছে। ‘ভবিষ্যপুরাণ’-এ বলা হয়েছে— পুজো বলিহীন হলে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়।

পুজোয় সর্বশ্রেষ্ঠ বলি আত্মবলি। নিজের লোভ, অহংকার, কামনা-বাসনা বলির নাম ‘আত্মবলি’। ভগবতীর কাছে নিজেকে অর্থাৎ ভিন্ন সত্তা বুদ্ধিকে বলি দিলে ব্রহ্মোপলব্ধি হয়। এটাই সাধনার চরম সিদ্ধি।

সূত্রঃ এবেলা

error: Content is protected !! Without permission do not copy the content. We will sue you if you copy the content without permission.